আমরা অনেকেই হয়তো দীর্ঘদিন কোনো প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি, কিন্তু কিছু কারণে পদোন্নতি হচ্ছে না। অনেক সময় কারণগুলো নিয়ে আমরা নিজেরাই সচেতন থাকি না। এমনই কয়েকটি কারণ এখানে তুলে ধরা হলো…
১. উদ্যোগের অভাব
অফিসে আপনি নবীন হোন কিংবা পুরোনো, আপনার বস আপনাকে স্বাধীনভাবে কিছু কাজ করতে দেওয়ার জন্যই চাকরিতে রেখেছেন। একটা কাজ দিলে প্রতিবার গিয়ে যদি বসকে জিজ্ঞাসা করতে থাকেন, ‘এরপর কী করব?’ তাহলে কিন্তু আপনার পদোন্নতি আটকে থাকবে। বিশেষজ্ঞরা বলেন, নিয়োগকর্তারা এমন কর্মীই চান, যাঁদের রাখলে কোম্পানির লাভ হবে। লাভ বলতে তাঁরা কোম্পানির সময় এবং টাকা দুই-ই বাঁচাবেন। নিয়োগকর্তারা একজন কর্মী ঠিকমতো কাজ করছেন কি না, তা বারবার খেয়াল রাখতে নারাজ। তাতে সময় ও শক্তির অপচয়। নিয়োগকর্তাদের যুক্তি হলো ওই একই সময় ও শক্তি অন্য কোনো কাজে লাগালে আরও বেশি সুফল ঘরে তোলা সম্ভব। অতএব উদ্যোগী হোন। নিজের বুদ্ধি খাটিয়ে বসের আস্থাভাজন হয়ে উঠুন।
২. কাজে সরাসরি যুক্ত না থাকা
শুধু সময়মতো অফিসে যাওয়া–আসাই কিন্তু সবকিছু নয়। কাজসংক্রান্ত প্রতিটি আলোচনায় আপনি অংশ নেবেন, এটাই সবাই আশা করে। দেখা গেল, দলের সব সদস্য কাজ নিয়ে আলোচনা করছেন, অথচ আপনি বসে আছেন অলসভাবে। এতে বোঝা যায়, কাজের প্রতি আপনার আগ্রহ নেই। পদোন্নতি পেতে চাইলে ধারাবাহিকভাবে আপনার আগ্রহ–উদ্দীপনা এবং কর্মতৎপরতা ধরে রাখুন। এতে আপনি বসের সুনজরে থাকবেন।
৩. কাজের সঙ্গে ব্যক্তিগত আবেগ মিলিয়ে ফেলা
অফিসে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি হতেই পারে। তবে বেশির ভাগ নিয়োগকর্তাই তাদের কর্মীদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক নিরুৎসাহিত করে। এতে ভজকট পাকিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রবল। কর্মস্থলের পরিবেশ এবং পুরো দলের কাজের গতি নষ্ট হয় এতে। আপনার প্রেম প্রভাব ফেলবে আপনার সহকর্মী, প্রকল্প, দায়িত্ব এবং অবশ্যই পদোন্নতির ওপর। সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কের কারণে আপনার বাকি সহকর্মীরা আপনাকে এড়িয়েও চলতে পারে। এমনকি আপনি গুরুত্বপূর্ণ কোনো পদে থাকলে আপনার পুরো কোম্পানি ভালোভাবে চালানোই কঠিন হয়ে যাওয়া অসম্ভব নয়। মোদ্দাকথা, কাজের সঙ্গে কখনো ব্যক্তিগত আবেগ মিশিয়ে ফেলবেন না।
৪. অফিসে দেরি করে আসা, তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া
আপনার বসের চোখে হয়তো ব্যাপারটা ধরা না–ও পড়তে পারে। কিন্তু আপনি বারবার এমন করতে থাকলে আপনার সহকর্মীরা ব্যাপারটা ঠিকই খেয়াল করবেন। দেরি করে আসার মানে হলো আপনি আপনার দায়িত্বে অবহেলা করছেন। অন্যের সময়ের প্রতিও আপনার কোনো সম্মান নেই। কারণ, আপনার কাজের সঙ্গে বাকিদের কাজও যুক্ত। তাই পদোন্নতি এবং সহকর্মীর শ্রদ্ধা অর্জন করতে চাইলে সময়মতো অফিসে পৌঁছানোর অভ্যাস করুন এবং এই অভ্যাস ধরে রাখুন।
৫. কেবলই অভিযোগ করা
ক্রমাগত অভিযোগ করা মানুষের আশপাশে কেউ থাকতে চায় না। এমনকি তারা ওই অভিযোগের সঙ্গে একমত হলেও। পেশাগত জীবনে হতাশা আসবেই। কিন্তু অভিযোগ করে কোনো কাজ হবে না। টানা অভিযোগ করতে থাকলে আপনার সহকর্মীরা মনে করবেন আপনি নেতিবাচক মানুষ। এতে তাঁরা আপনার সম্পর্কে দুটো ভালো কথা বলার অবকাশও পাবেন না। এমনকি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আপনাকে তিরস্কারও করতে পারেন। প্রতিটি পরিস্থিতি কীভাবে মোকাবিলা করতে হয়, তা শিখুন। অভিযোগ করা বন্ধ করুন। নেতিবাচক মানুষের কেউই দলে নিতে চায় না। এমনকি যে সমস্যাটি সমাধান করাই সম্ভব নয়, তা নিয়েও অভিযোগ করবেন না। বরং নিজের জায়গা থেকে সমাধানের চেষ্টা করুন।
৬. প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে না বোঝা
প্রাতিষ্ঠানিক সভা–সমাবেশ আপনার পছন্দ না-ই হতে পারে। কিন্তু প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হয়ে থাকলে আপনাকে অবশ্যই কিছু দীর্ঘ আলোচনায় অংশ নিতে হবে। বার্ষিক প্রতিবেদন কিংবা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য নির্ধারণবিষয়ক মিটিং বা আলোচনা শুনতে হবে মনোযোগ দিয়ে। এমনকি আপনার প্রতিষ্ঠান ছোট হলেও জ্যেষ্ঠ কর্মীরা সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য যা বলেন, তা মনোযোগ দিয়ে শোনা উচিত। বিশেষজ্ঞদের মতে, পদোন্নতি পেতে চাইলে আপনার প্রতিষ্ঠান পরবর্তী পাঁচ বছরে কী কী অর্জন করতে চায়, তা নোট করে রাখুন। এতে আপনিও চিহ্নিত করতে পারবেন, প্রতিষ্ঠানকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে আপনার কী কী বিষয়ে দক্ষতা বাড়ানো প্রয়োজন।
৭. সবকিছুতেই ‘না’ বলা
কোনো পরিকল্পনা, আইডিয়া বা কৌশল কেন কাজ করবে না, তা প্রথমেই খুঁজে বের করার অভ্যাস থাকলে আপনার পদোন্নতি ঝুলে থাকবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো এবং গঠনমূলক সমালোচনা করার ক্ষেত্রে ভারসাম্য বজায় রাখা প্রয়োজন। আপনি যদি ক্রমাগত অন্যদের সৃষ্টিশীল আইডিয়া নাকচ করে দেন, অন্যদের সমাধান ও কৌশল শোনামাত্রই তর্ক শুরু করেন, তাহলে প্রতিষ্ঠানের উন্নতি এবং অগ্রযাত্রা ব্যাহত হয়। খোলামেলা আলোচনার মতো কোনো পরিবেশ সেখানে আর থাকে না।
৮. অনুরোধ এবং অতিরিক্ত কাজের দায়িত্ব ফিরিয়ে দেওয়া
মাঝেমধ্যে এমন কিছু কাজ হাতে আসতে পারে, যা পুরোপুরি আপনার ‘জব ডেসক্রিপশনে’ নেই। কিংবা কোনো কাজের জন্য অফিসে আপনার একটু সকাল সকাল আসতে হতেই পারে। আবার একটু বেশি সময় অফিসে থাকারও প্রয়োজন হতে পারে। তবে এসব ক্ষেত্রে আপনি যদি সঙ্গে সঙ্গে কাজটির প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন, তাহলে দলবদ্ধভাবে কাজ করতে আপনি আদতে অপারগ। আপনার বস যদি লক্ষ করেন যে আপনি ক্রমাগত সাহায্যের আবেদন ফিরিয়ে দিচ্ছেন, তাতে আপনার ক্ষতি। কোনো প্রকল্প বা উদ্যোগের দায়িত্ব আপনাকে দেওয়া হলে আপনি তা করতে অপারগতা প্রকাশ করলে আপনার পদোন্নতির কোনো সম্ভাবনা নেই। অতিরিক্ত কাজ দিলেই যে আপনি সব সামলে হাসিমুখে করে দেবেন, তা কেউ–ই সব সময় আশা করে না। এমনকি কাজটাতে আপনি যে সফল হবেন, তা নিয়েও সবাই হয়তো শতভাগ নিশ্চিত নন। এরপরও অন্যকে সহযোগিতা করার মানসিকতা আপনাকে অনেক এগিয়ে রাখবে।
৯. অন্যের ওপর দোষ চাপানো এবং দায় না নেওয়া
কিছু মানুষের স্বভাবই হলো অন্যের ওপর দোষ চাপানো এবং নিজের কোনো ভুল হলে সেটার পক্ষে অজুহাত দাঁড় করানো। নিয়োগদাতারা এমন কর্মীই চায়, যাঁরা ভুলের দায় গ্রহণ করেন, যাঁরা সমস্যার সমাধান বের করেন এবং ভুল শুধরে নেন। আমরা সবাই ভুল করি। ভুল থেকে শিখি এবং বেড়ে উঠি। কিন্তু ভুল করার পর আমরা তার দায় কীভাবে স্বীকার করি এবং কীভাবে তা শুধরে নিই, তার ওপর অনেকাংশেই নির্ভর করে আমাদের পদোন্নতি হবে কি হবে না।
১০. অপেশাদার পোশাক-আশাক ও আচরণ
সব অফিসে ‘ড্রেস কোড’ থাকে না। ধরা যাক, আপনার অফিসেও নেই। তাই বলে ইচ্ছেমতো পোশাক পরে অফিস করা শোভনীয় নয়। অফিসে প্রতিদিন গোসল করে, পরিষ্কার পোশাক পরে গেলে আপনার ভাবমূর্তির উন্নতি হবে। সবার সামনে নাক খোঁটা, কান চুলকানো, এমনকি সবার সামনে হাঁচি দেওয়ার মতো বদভ্যাসও ত্যাগ করুন। এ ছাড়া সহকর্মীকে খোঁচা দিয়ে কথা বলা, অধস্তনকে অপমান করা কিংবা অফিসের ক্যানটিনে চেঁচামেচি করাও ভালো কথা নয়। এসবই আপনাকে নেতিবাচক ব্যক্তিত্ব হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে এবং দিন শেষে পদোন্নতির সময় পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবে।
সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট