বিনোদন খবরঢালিউড

নায়ক মান্না হত্যার ন্যায় বিচার চেয়ে হাইকোর্টে তার স্ত্রী শেলী মান্না!

Sheli%20Manna64cf69aab3196 নায়ক মান্না হত্যার ন্যায় বিচার চেয়ে হাইকোর্টে তার স্ত্রী শেলী মান্না!

বাংলা চলচ্চিত্রের অনবদ্য এক নাম মান্না। সালমান শাহর মৃত্যুর পর ঢাকাই সিনেমার হাল একাই ধরেছিলেন এই তারকা।

সামাজিক, রোমান্টিক, অ্যাকশন- সব ঘরানার সিনেমা দিয়ে দর্শকের মন জয় করে নেওয়া প্রয়াত এ অভিনেতা এখনও ভক্তদের স্মৃতিতে উজ্জ্বল। জনপ্রিয়তার তুঙ্গে থাকা অবস্থায় ২০০৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি মাত্র ৪৪ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন ঢালিউডের এই মহাতারকা। মান্নার পরিবারের দাবি, স্বাভাবিক মৃত্যু নয় বরং ভুল চিকিৎসায় মাধ্যমে হত্যা করা হয়েছে মান্নাকে।

হত্যা করা হয়েছিল নায়ক মান্নাকে!

২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেন নায়ক মান্নার শ্যালক রেজা কাদের। আরটিভির সঙ্গে আলাপকালে নায়ক মান্নার স্ত্রী শেলী মান্না বলেন, ২০০৮ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ইউনাইটেড হাসপাতালের ছয় চিকিৎসকের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে মামলা করেছি। এখনও নিষ্পত্তি হয়নি। আমি মান্না হত্যার বিচার চাই। মান্না হত্যার ন্যায় বিচার নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। কারণ তিনি স্বজন হারিয়েছেন। স্বজন হারানোর মর্মটি তিনি ভালো বোঝেন।

হত্যা করা হয়েছিল নায়ক মান্নাকে!

শেলী মান্না বলেন, আমি একজন ডাক্তারের মেয়ে। আমার বাবা একজন ডাক্তার। বাংলাদেশে এমবিবিএস তখনো চালু হয়নি। আমার বাবা কলকাতা থেকে পাস করেছেন। সেই আমলের ডাক্তার। আমার বাবা যেহেতু আক্তার, সেহেতু আমি ডাক্তারদের খাটো করে কিছু বলছি না। বলতে গেলে আমাদের দেশের সিস্টেম, প্রক্রিয়ার কথা বলতে হয়। আমার বাবা ডাক্তার, সেহেতু আমি কিছুটা জানি।

তিনি বলেন, মান্না মাঝরাতে যখন বাসায় ফিরেছে তখন বুকে হালকা ব্যথা করছিল। রাতে খাওয়া-দাওয়া করেছে, কিন্তু ব্যথা যায়নি। তিনি নিজের সাস্থ্য নিয়ে অতি সতর্ক ছিলেন। আমরা হলে হয়তো এতটা হতাম না। একটা অ্যালার্জি হলেও ডাক্তারের কাছে যায়। ওর অসুখবিসুখ বলতে কিছু ছিল না, শুধু এসিডিটি ছিল। যেহেতু ব্যথা কমছে না, মান্না ভাবল ইউনাইটেড হাসপাতালে যাই। কেন ইউনাইটেডে যাবে, কারণ ‘পিতা-মাতার আমানত’ ছবির শুটিং ইউনাইটেড হাসপাতালে করা হয়েছিল। তখন মনে হয়েছিল, ইউনাইটেড হাসপাতালটি ভালো, ওয়েল অর্গানাইজড।

হত্যা করা হয়েছিল নায়ক মান্নাকে!

সেদিন হাসপাতালে মান্নার সঙ্গে যা ঘটে তার বর্ণনা দিয়ে শেলী বলেন, ডাক্তারের ভাষায় অ্যাকিউট হার্ট অ্যাটাক, কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে। যদি কারো কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় সে কোনোভাবেই গাড়ি চালিয়ে যেতে পারবে না। একটা স্টেপও নিতে পারবে না। ইউনাইটেড হাসপাতাল আমাদেরকে যেসব ফুটেজ দিয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে মান্না হেঁটে গিয়েছে। তার বিভিন্ন টেস্ট করিয়েছে। তারপর ভর্তি হয়েছে। তাকে কিন্তু কেউ ধরেও নেয়নি, কিছু না। সে একজন স্বাভাবিক মানুষ গিয়েছে। গ্যাসের পেইন, হার্টের পেইন সেইম। ডাক্তাররাও একইভাবে ট্রিটমেন্ট করেন।

তিনি বলেন, মান্না যখন হাসপাতালে ভর্তি হলো তখন ভোর পৌনে ৫টা। আমি যদি বাংলাদেশে থাকতাম তাহলে কী করতাম? যে হার্টের স্পেশালিস্ট তাকে দেখাতাম। আমার যখন হাত ভেঙে গিয়েছিল তখন আমি অর্থোপেডিকস ডাক্তারের কাছেই গিয়েছিলাম। সাধারণ ডাক্তাররা কিন্তু আমার হাত জোড়া লাগাতে পারবে না। মান্নার চিকিৎসা কিন্তু সাধারণ ডাক্তাররা করেছে। ট্রিটমেন্ট করে যখন কন্ট্রোলের বাইরে চলে গেছে। ৭টা ৪০-এর দিকে তারা হার্টের একটা ইনজেকশন দেয়। ইনজেকশনের নাম এসকে। অভিজ্ঞ ডাক্তার ছাড়াই এসব করা হয়েছে। আমরা কেস করেছি, এগুলো পয়েন্ট আছে। উন্নত দেশে অপারেশন থিয়েটার প্রস্তুত রেখে, কার্ডিওলজিস্ট সঙ্গে রেখে তারপর ওই এসকে ইনজেকশন দেওয়া হয়। মান্নার বেলায় এসব করা হয়নি। ওই ইনজেকশন দেওয়ার পর মান্না গোঙরাচ্ছিল। এক পর্যায়ে মান্না বমি করে দেয়। তাদের ডাক্তার রুটিন অনুযায়ী ৯টায় এসেছে। ডাক্তার ফাতেমার আন্ডারে ট্রিটমেন্ট। ওই হাসপাতালে কি প্রোসিডিউর ছিল না বলেন? ওই সময় ইমার্জেন্সিতে নিয়ে অভিজ্ঞদের সঙ্গে নিয়ে রাইট টাইমে রাইট চিকিৎসাটা করত, দুই ঘণ্টা ৪০ মিনিটের হিসাব কিন্তু দিতে পারেনি।

প্রসঙ্গত, নায়ক মান্নার প্রথম ছবি ‌‌‌’তওবা’। ১৯৮৬ সালে নায়করাজ রাজ্জাকের এক বন্ধুর প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান থেকে নির্মিত ‘তওবা’ সিনেমায় অভিনয়ের সুযোগ ঘটে মান্নার। শুরুতে একের পর এক অ্যান্টি হিরো হিসেবে অভিনয় করেছেন মান্না।

আশির দশকে মান্না যখন ছবিতে অভিনয় শুরু করেন, সে সময় রাজ্জাক, আলমগীর, জসীম, ফারুক, জাফর ইকবাল, ইলিয়াস কাঞ্চনের নায়ক হিসেবে বেশ দাপট। সেই দাপুটে অভিনেতাদের মাঝেও ‘তওবা’, ‘পাগলী’, ‘ছেলে কার’, ‘নিষ্পাপ’, ‘পালকি’, ‘দুঃখিনী মা’, ‘বাদশা ভাই’-এর মতো ব্যবসা-সফল ছবি উপহার দিয়েছেন মান্না।

হত্যা করা হয়েছিল নায়ক মান্নাকে!

মান্না অভিনীত প্রথম ছবি ‘তওবা’ হলেও প্রথম মুক্তি পাওয়া ছবির নাম ‘পাগলী’। ১৯৯১ সালে মোস্তফা আনোয়ার পরিচালিত ‘কাশেম মালার প্রেম’ ছবিতে প্রথম একক নায়ক হিসেবে সুযোগ পেয়েছিলেন মান্না। এ ছবিটি সুপার হিট হওয়ার কারণে একের পর এক একক ছবিতে কাজ করার সুযোগ পান মান্না। এরপর কাজী হায়াতের ‘দাঙ্গা’ ও ‘ত্রাস’ তার ক্যারিয়ারের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। নব্বইয়ের দশকের শুরুতে নাঈম-শাবনাজ, সালমান-শাবনূর, সানী-মৌসুমি জুটি বেশ সফল। তাদের পাশাপাশি মান্নাও দাঁড়িয়ে যান।

১৯৯৬ সালে সালমান শাহের হঠাৎ মৃত্যুতে প্রযোজক-পরিচালকেরা দিশেহারা হয়ে পড়লে সে সময়ে পরিচালকদের চোখে একমাত্র আস্থার নায়ক হিসেবে ধরা দেন মান্না। মান্নাও পুরো চলচ্চিত্র ইন্ডাস্ট্রিকে নিজের কাঁধে তুলে নেওয়ার মতো কঠিন দায়িত্বটি নিষ্ঠার সঙ্গেই পালন করেন। ১৯৯৭ সালে নায়ক থেকে প্রযোজনায়ও আসেন মান্না। মান্নার প্রথম ছবি ‘লুটতরাজ’ সুপারহিট ব্যবসা করে। এরপর বাংলাদেশি চলচ্চিত্রে শুরু হয় মান্না-অধ্যায়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত মান্না একাই লড়ে গেছেন। বাংলাদেশের বাণিজ্যিক চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে তার নাম স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

Show More
এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো। বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button